স্থানীয় সরকার যে সকল কার্যাবলী সম্পন্ন করে তা নিম্নরুপঃ-
০১. পৌর কার্যাবলীঃ- স্থানীয় সরকার ( ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ৩০ ধারায় পৌর কার্যাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। পৌর কার্যাবলী ২ ভাগে বিভক্ত বাধ্যতামূলক এবং ঐচ্ছিক। তবে বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক কার্যাবলী ছাড়াও সরকার সকল বা নির্দিষ্ট কোন ইউনিয়ন পরিষদকে পৃথক কোন দাষিত্ব পালনের নির্দেশ দিতে পারে।
এছাড়া প্রচলিত অন্য কোন আইনের মাধ্যমে সরকার ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দিতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদকে ১০টি বাধ্যতামূলক এবং ৩৮টি ঐচ্ছিক দায়িত্বাবলী দেওয়া হয়েছে।
০২. পুলিশ ও নিরাপত্তাঃ- সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার গ্রাম পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও শিষ্ঠাচার নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের চাকুরীর শর্তাবলী নির্ধারণ করবে। অধ্যাদেশের প্রথম তফশিলের ২য় অংশে গ্রাম পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতা ও দায়িত্বাবলী নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক যদি মনে করেন যে, কোন ইউনিয়ন বা তার অংশবিশেষে গ্রাম প্রতিরক্ষা বা জন নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা হলে তিনি আদেশ জারীর মাধ্যমে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তাঁর আদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন বা অংশবিশেষে সক্ষম যুবক পুরুষ বসবাসকারী টহল দেবেন। জেলা প্রশাসকের আদেশ অনুযায়ী পরিষদ তার ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালন করবে।
০৩. রাজস্ব ও প্রশাসন। নিজস্ব দায়িত্ব সম্পাদন ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদঃ- (ক) রাজস্ব ও সাধারণ প্রশাসন কাজে সহায়তা করবে।
(খ) রাজস্ব অথবা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে রাজস্ব ও কর্মকর্তা এবং সাধারণ প্রশাসনকে সহায়তা করবে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী ইউনিয়নের রাজস্ব ও প্রশাসন পরিচালনা, রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড ও মূল্যায়ন তালিকা প্রণয়ন, সার্ভে বা শস্য পরিদর্শনে সহায়তা করবে।
(গ) কোন অপরাধ সংগঠিত হলে পুলিশকে অবহিত করবে। জনসম্মুখে পুলিশকে কুখ্যাত চরিত্রের ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং তদন্ত কাজে, অপরাধ দমনে এবং অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সহায়তা করবে।
(ঘ) জনপথ, রাস্তা বা জনসাধারণের জায়গায় অবৈধ দখল অথবা দালান বা সম্পত্তির ক্ষতি হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করবে।
(ঙ) সরকার অথবা অন্য কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পক্ষে নির্দেশ অনুযায়ী জনসাধারণকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে সকল বিষয় অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হলে, তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবহিত করবে এবং
(চ) কর্মকর্তাদেরকে তাদের কাজে সহায়তা করবে এবং উক্ত কর্মকর্তাগণের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যদি সরবরাহ করবে।
০৪. উন্নয়ন ও দারিদ্র দুরীকরণঃ- গ্রাম উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। কৃষি ও কুটির শিল্পের উন্নতি ও সমবায় আন্দোলনের বিস্তার এবং বন, পশু ও মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়ন পরিকল্পনা এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে একে যেসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেমন কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বস্থ্য, কুটির শিল্প ইত্যাদি বিষয়ক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।
০৫. বিচারঃ- আমাদের দেশের দরিদ্র জনসাধারণের অধিকাংশই গ্রামে বাস করে। এ দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে শহরে গিয়ে দীর্ঘদিন মামলা মোকদ্দমা চলানো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। সুতরাং তাদেরকে ঝগড়া বিবাদের মীমাংসা ও মামলা মোকদ্দমা নিস্পত্তি এবং বিড়ম্বনা ও এ সংক্রান্ত খরচের হাত থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য সরকার গ্রামাঞ্চলে গ্রাথমিকভাবে বিচার ব্যবস্থার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের উপর ন্যস্ত করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত গঠনের মাধ্যমে কতিপয় ফৌজদারী ও দেওয়ানী উভয় প্রকার মামলার বিচার করতে পারে।
বিচার বিষয়ক কার্যাবলীঃ- এলাকায় বিচার বিষয়ক কার্যাবলী সম্পাদনায় পরিষদের চেয়ারম্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা নিস্পত্তি করেন, ফলে জনসাধারণ জেলা আদালতে মামলা পরিচালনার বিভিন্ন অসুবিধা হতে রেহাই পান। এছাড়া চেয়ারম্যান ছোট খাট ঝগড়া-বিবাদ, দাংগা-হাংগামা ও জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ব্যক্তিগত উদ্যোগে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে থাকেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস